রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শীষ মোহাম্মদ ভারতে পালানোর চেষ্টা

রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শীষ মোহাম্মদ ভারতে পালানোর চেষ্টা

রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শীষ মোহাম্মদ ভারতে পালানোর চেষ্টা
শীর্ষ মাদক কারবারি শীষ মোহাম্মদ

মতিহার বার্তা ডেস্ক: অভিযান থেকে নিজেকে বাঁচাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক কারবারিরা ও আন্তজার্তিক মাফিয়া চক্রের অন্যতম সদস্য শীষ মোহাম্মদ ভারতে পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সহায়তায় এরই মধ্যে কয়েকবার ভারতে ঘুরে এসেছে সে। দেশব্যাপী অবৈধ কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা আসার পরে দেশের মধ্যেকার শীর্ষ এই মাদক ব্যবসায়ী এবং ভারতের তালিকাভূক্ত শীর্ষ হেরোইন ও জাল টাকা পাচারকারী শীষ মোহাম্মদ আবারো ভারত পালানোর সুযোগ খুঁজছে।

এরই মধ্যে ভারতের ভিসা পেতে জোর তদবির চালাচ্ছে সে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ একাধিক নেতাকে দিয়ে এই ভিসার জন্য তদবিরও করা হয়েছে। তবে কয়েকবারই তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে হেরোইনের ট্রানজিট হিসেবে পরিচিত গোদাগাড়ীর অন্য শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরাও এরই মধ্যে এলাকাছাড়া হয়েছে। তাদেরও কেউ কেউ ভারতে বা বিদেশে পাড়ি দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহীর মাদকের সবচেয়ে বড় কারবার হয় জেলার গোদাগাড়ীতে। এই গোদাগাড়ীকে এশিয়ার মধ্যে হেরোইনের ট্রানজিট মনে করা হয়। এদিক দিয়েই কখনো কখনো একইদিনে মণকে মণ হেরোইন পাচারও হয়ে থাকে। দেশব্যাপী মাদকববিরোধী ব্যাপক অভিযানের মধ্যেও সম্প্রতি ১-৬ কেজি পর্যন্ত হেরোইনও জব্দ করা হয়েছে সম্প্রতি কয়েক বার।

সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের (৫ কেজি ২০ গ্রাম) হেরোইন জব্দ করেছে র‌্যাব। এসময় একজন বাইসাইকেল আরোহী মাদক পাচারকারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। উপজেলার সারাংপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মাদক ব্যবসায়ী হলো নাজিবুর রহমান (৪৫)। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোদালকাঠি এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে।

সূত্র মতে, গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা বরাবরই থেকেছেন ধোরা-ছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে গোদাগাড়ীর সিএ্যান্ডবি গড়ের মাঠ এলাকার বাসীন্দা শীষ মোহাম্মদ ও হযরত আলী, মাটিকাটা এলাকার সোহেল রানাসহ অর্ধশত মাদক কারবারি এখনো অধরা। এদের মধ্যে আন্তজার্তিক মাফিয়া হলো শীষ মোহাম্মদ ও সোহেল রানা। শীষ মোহাম্মদ বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষ ১০ জন মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবে ধরা হয়। এই মাদক সম্রাট বছর পাঁচেক আগে রাজশাহী শহরে এসে আসর গেঁড়ে বসেন। এরপর তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতি থেকে শুরু করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন। শত শত কোটি টাকার মালিক এই মাদক ও জাল টাকার কারবারি শীষ মোহাম্মদের রাজশাহী শহরে রয়েছে একাধিক বাড়ি। চড়েন পাঁজেরো গাড়ীতে। এই শীষ মোহাম্মদ সম্প্রতি একাধিকবার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে ভারত সফর করে এসেছেন। এছাড়াও সুন্দরবন সফরেও গেছেন এই বহর নিয়ে। সেসব ছবি ফেসবুকের পাতায় ভাসে এখনো। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দেশব্যাপী অবৈধ টাকার মালিকদের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর এই সে এবার ভারত পালানোর চেষ্টা করছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র মতে, শীষ মোহাম্মদ এরই মধ্যে দুইবার ভারতীয় ভিসা পেতে আবেদন করেছে। তবে দুইবারই তার আবেদন নাকোচ করা হয়েছে। তবে ভিসা পেতে তিনি আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে দিয়েও তদবির করিয়েছেন। এই মাদক ব্যবসায়ী ভারতেরও তালিকাভূক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের স্থানে নিজেকে জায়গা করে নেওয়ায় তাকে ভিসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তার ভিসা পেতে চলছে নানা তদবির।

এদিকে অপর কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গোদাগাড়ীর অন্য শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সোহেল রানা, হযরত আলী, মহিশালবাড়ি এলাকার হেলালুদ্দিন, মহিশালবাড়ি এলাকার সেলিম, রেলগেট মাটিকাটা এলাকার নাসির উদ্দীন নয়ন, মাদারপুর এলাকার নাজিবুর রহমান, ডাইংপাড়া এলাকার হায়দার আলী, মাদারপুর এলাকার টিপু, ডাইংপাড়া এলাকার আনারুল ইসলাম, মাদারপুরের তোফাজ্বল, সহরাগাছী এলাকার জসিম উদ্দীনসহ অন্যরাও এরই মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে সোহেল রানা ও হযরত আলী এরই মধ্যে ভারতে পাড়ি জমিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। এ ছাড়াও অন্যদের মধ্যে কেউ ভারতে, কেউ ঢাকায় বা কেউ গোদাগাড়ীর দুর্গম চর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

এদের বিষয়ে জানতে চাইলে একটি সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আবারো জোরেসরে চলবে এমন আশঙ্কায় তারা গা ঢাকা দিয়েছে। কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দেওয়ারও চেষ্টা করছে। তবে এদের নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।

জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শীষ মোহাম্মদ, সোহেল রানাসহ আরো অনেক মাদক ব্যবসায়ী এলাকাছাড়া। তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর চলছে। এরা কোথায় আত্মগোপনে থাকতে পারে, সেদিকটাও নজরে আনা হচ্ছে।’

মতিহার বার্তা ডট কম – ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply